Monday, 2 November 2015

বুক জালাপোরা করা

বুক জ্বালাপোড়া কি?

বুক জ্বাল পোড়া হচ্ছে-বুকের ভিতরের মধ্যবর্তী স্থান থেকে শুরু করে গলা পর্যন্ত জ্বালাকর অনুভুতি। এই জ্বালা কখনও কখনও শুধু বুকে আবার কখনও কখনও শুধু গলায় বা উভয় স্থানে হতে পারে। মাঝে মাঝে জ্বালার সাথে ব্যাথ্যা থাকতে পরে। মাঝে মাঝে কিছু তরল পদার্থ পাকস্থলী থেকে গলনালী দিয়ে মুখ চলে আসে, অর্থাৎ উল্টা পথে ধাবিত হয়, একে বলা হয় Gastro esophageal reflax.

বুক জ্বালপোড়ার কারণ কি?

চিকিৎসা বিজ্ঞানের দীর্ঘ দিনের গবেষণায় বুক জ্বালাপোড়ার যে সকল কারণ বেরিয়ে এসেছে সেগুলো হচ্ছে –

# অ্যালকোহল সেবন করা।

# চা, কফি অতিরিক্ত মাত্রায় সেবন করা।

# কালো গোল মরিচ, সিরকা যুক্ত খাবার বেশি খাওয়া।

# তৈলাক্ত খাবার, ভাজাপোড়া বেশি পরিমাণে খেলে বুক জ্বালাপোড়া হয়।

# আচার, টমেটোর সস, কমলার রস, পেয়াজ, পিপারমেন্ট ইত্যাদি খাবার বুক জ্বালাপোড়া বাড়িয়ে দেয়।

# মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তাও বুক জ্বালাপোড়ার জন্য দায়ী।

# ধুমপান হচ্ছে বুক জ্বালাপোড়ার আরও একটি অন্যতম কারণ।

# পিত্ত থলিতে পাথর থাকলেও বুক জ্বালাপোড়া হয়।

# পাকস্থলীর উপর চাপ পড়লে বুক জ্বালাপোড়া হয়। পাকস্থলীর উপর চাপ বলতে বুঝায়- এক সাথে বেশি পরিমাণ খাওয়া, স্থুলতা, গর্ভাবস্থা, শক্ত ও মোটা বেল্টের প্যান্ট পড়া ইত্যাদি।

এখন অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে বুক জ্বালাপোড়ার লক্ষণ কি কি হতে পারে। আপনি কিভাবে বুঝবেন যে আপনি আসলেই বুক জ্বালাপোড়ায় ভুগছেন।

নিচের লক্ষণগুলোই হল বুক জ্বালাপোড়ার লক্ষণ:

# পেটের উপরের দিকে মৃদু ব্যথ্যা হওয়া।

# বুকে ব্যথ্যা হওয়ার সাথে জ্বালা ভাব থাকে।

# বুক জ্বালা কখনও খাবার গ্রহণের পরে হয়। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে পেট খালি থাকলে হয়।

# মাঝে মাঝে ঢেকুর উঠে।

# বুক ব্যাথ্যা – এটি হচ্ছে বুক জ্বালার একটি লক্ষণ। পাকস্থলীর এসিড সম্প্রসারিত হয়ে খাদ্যনালীর উপর পর্যন্ত চলে আসে এবং বুকে ব্যথ্যা ও জ্বালা হয়। এই ব্যাথ্যা ও জ্বালা কখনও স্বল্পস্থায়ী আবার কখনও দীর্ঘস্থায়ী হয়। বুকের ব্যথ্যা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় ও বাম বাহুতে চলে আসে এবং ব্যায়াম করার সময় বৃদ্ধি পায়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যাবেন।

# বিশ্রামের সময় বুক জ্বালাপোড়া ও ব্যাথ্যার বৃদ্ধি হয়। আমরা যখন শুয়ে থাকি বা আধো শোয়া অবস্থায় থাকি তখন এসিড খাদ্যনালী দিয়ে উপরে উঠে আসে। ফলে বুক জ্বালাপোড়া হয়। Dr. Coyle এর মতে, আমরা যখন সোজা হয়ে বসে থাকি তখন মধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে খাদ্যবস্তুসমুহ পাকস্থলীতে থাকে, তাই বুক জ্বালাপোড়া কম হয়।

# মুখে তিতা স্বাদ অনুভুত হওয়া। এই ঘটনা সকালের দিকে বেশি ঘটে।

# স্বরভঙ্গ – স্বরভঙ্গ হচ্ছে বুক জ্বালপোড়ার একটি অস্বাভাবিক লক্ষণ। ঠাণ্ডা
লাগার প্রথম অবস্থায় যে রকম হয় ঠিক সে রকম হয়। অমস্ন বা এসিড গলা পর্যন্ত উঠে আসার কারণে এরকম হয়। এসিড কন্ঠস্বরকে ভারি করে তোলে।

# গলায় ক্ষত – বুক ও গলা জ্বালার সাথে গলায় ক্ষত হয়। মনে হয় যেন গলা ছিলে গেছে। এসিড খুব ক্ষতকারী তাই এই রকম হয়। খাদ্য গ্রহণের পরপর এ রকম হলে বুঝতে হবে এটা বুক জ্বালাপোড়ার সাথে সম্পৃক্ত।

# খাদ্য গ্রহণের পরপর কাশি শুরু হয়। পাকস্থলীর এসিড ফুসফুস পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে, বুক জ্বালার সাথে সাথে শ্বাসপ্রশ্বাসে অসুবিধা হয়।

# বমিবমি ভাব ও বমি হতে পারে। মুখে অতিরিক্ত লালা উঠতে থাকে।

# দীর্ঘ দিন যাবৎ বুক জ্বালাপোড়া চলতে থাকলে এসিডের কারণে খাদ্যনালী সংকুচিত হয়ে যায়। ফলে খাবার গিলতে কষ্ট হয়।

বুক জ্বালাপোড়া কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়:

একটি কথা প্রচলিত আছে যে, Prevention is batter then cure অর্থাৎ রোগ হওয়ার আগেই সচেতন হওয়া ভাল। ওষুধ ব্যতীত বুক জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তি পেতে হলে কিছু নিয়ম মেনে চলা আমাদের সবার জন্য দরকার। নিয়ম গুলো হলো:

> যেসব খাবার ও পানীয় খেলে আপনার বুক জ্বালাপোড়া করে সেগুলো চিহ্নিত করুন এবং এড়িয়ে চলুন।

> ধুমপান বর্জন করুন।

> একসাথে বেশি পরিমাণে না খেয়ে কিছুক্ষণ (২ ঘণ্টা) পরপর অল্প অল্প করে খান। তাহলে খাবার দ্রুত হজম হবে। এবং পেটে অতিরিক্ত গ্যাস ও এসিড উৎপন্ন হবে না। এর পরিনামে আপনি বুক জ্বালাপোড়া হতে রেহাই পাবেন।

> খাওয়ার পরপর শুয়ে পড়বেন না, ব্যায়াম করবেন না। ১ ঘন্টা অপেক্ষা করুন, তারপর ঘুমুতে যান।

> ঘুমানোর সময় বিছানা থেকে মাথাকে ৪ থেকে ৬ ইঞ্চি উচুতে রেখে শয়ন করুন।

> শরীরের বাড়তি ওজন কমিয়ে ফেলুন।

> ঢিলেঢালা পোশাক পরুন। মোটা বেল্টের প্যান্ট পড়বেন না।

> মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে চেষ্টা করুন।

গর্ভাবস্থায় বুক জ্বালাপোড়া :

গর্ভাবস্থায় বুক জ্বালাপোড়া এবটি সাধারন ও স্বভাবিক শরীরবৃত্তীয় ঘটনা বলা যায়। গর্ভাবস্থার চতুর্থ মাস থেকে বুক জ্বালাপোড়া শুরু হতে থাকে। হরমোনের মাত্রার পরিবর্তনের ফলে বুক জ্বালাপোড়া হয়। যার কারণে সমগ্র খাদ্যনালী ও পাকস্থলীর পেশীতে খাবারের বিভিন্নতার কারণে প্রতিক্রিয়া হতে পারে। প্রেগনেনসি হরমোনের (HCG) কারণে খাদ্যনালীর ভাল্ব শিথিল হয়ে যায়, যার কারণে পাকস্থলীর খাদ্যবস্তু ও পাকস্থলীতে সৃষ্ট এসিড গলনালীর গিকে ধবিত হয়। ফল স্বরূপ বুক জ্বালাপোড়া হয়। এছড়াও জরায়ুর বৃদ্ধির কারণে পাকস্থলীর উপর চাপ পড়ে। তাই খাদ্যবস্তু ও এসিড গলনালীর দিকে যায় এবং বুব জ্বালাপোড়া হয়।

প্রতিরোধ: গর্ভস্থ শিশু এবং নিজেকে এ থেকে মুক্ত রাখতে হলে নিচের নির্দেশনা সমুহ অনুসরন করতে পারেন।

* এক সাথে বেশি পরিমাণে না খেয়ে অল্প অল্প করে বারবার খান। খাবার ধীরে ধীরে ভালভাবে চিবিয়ে খান। এতে খাবার দ্রুত ও ভালভাবে হজম হবে।

* বুক জ্বালাপোড়া বৃদ্ধি করে এমন খাবার বর্জন করুন। যেমন – ভাজাপোড়া, অধিক মসলা যুক্ত খাবার, টক জাতীয় খাবার, সস ইত্যাদি।

* খাওয়া সময় পানি কম পান করবেন। খাওয়ার সময় পানি বেশি খেলে খাবার হজমে সহায়তাকারি হাড্রক্লোরিক এসিড পাতলা হয়ে যায়। ফলে খাবার হজমে সমস্যা হয় এবং এসিডকে উপরের দিকে চাপ দেয় ও বুক জ্বালাপোড়া বৃদ্ধি করে।

* খাওয়া শেষ করে সাথে সাথে শুয়ে পড়বেন না।

* ঘুমানোর সময় বিছানা থেকে মাথাকে ৪ থেকে ৬ ইঞ্চি উচুতে রেখে শয়ন করুন।

* ঢিলেঢালা পোষাক পরম্নন। আঁটসাঁট পোষাক পাকস’লী ও তলপেটে চাপ সৃষ্টি করে সমস্যার বৃদ্ধি ঘটায়।

* কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করুন।

গর্ভাবস্থায় বুক জ্বালাপোড়া শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়া পরে ভাল হয়ে যায়। এর পরেও কো সমস্যা থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

সতর্ক বার্তা: গর্ভাবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে কোন ঔষধ খাবেন না

বুকে ব্যাথা হওয়ার কারন ও সমাধান

বুকের ব্যাথা এতোটা জটিল সমস্যা যার জন্য কোনো ব্যক্তিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যেতে হয়। বিভিন্ন কারণে বুকে ব্যাথা হয়ে থাকে। প্রথমে দেখতে হবে বুকে ব্যাথা আঘাত জনিত কারণে না আঘাত বিহীন কারণে। যদি আঘাত বিহীন কারণে বুকে ব্যাথা হয় তাহলে প্রথমে নিশ্চিত হতে হবে হৃদরোগজনিত কারণে না অন্য কোনো কারণে বুকে ব্যাথা হয়েছে। এই কারণ নির্ধারনের জন্য রোগীর কাছ থেকে রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত ইতিহাস জানতে হবে এবং এর পর শারীরিক ও ল্যাব পরীক্ষা করে সঠিক রোগ নির্ণয় করলে বেশীর ভাগ বুকের ব্যাথা ভাল করা সম্ভব।

প্রথমে বুকের ব্যাথা কোন স্থানে-

বুকের মাঝ খানে
বাম না ডান পার্শ্বে

বুকে ব্যাথার প্রকৃতি-

চাপ চাপ ব্যাথা
মনে হয় বুকের মাঝ খানে পাথর বসিয়ে রেখেছে এমন
দমবন্ধ হয়ে আসে এমন বা অনুভূতিহীন যেমন হৃদরোগ জনিত কারণ।
তীব্র ব্যাথা
ছুড়ি দিয়ে আঘাত করলে যেমন মনে হয়
পোড়ানো ব্যাথা
শ্বাস নেবার সাথে সাথে তীব্র ব্যাথা।

ফুসফুসজনিত কারণ যেমন :

নিমোনিয়া
পালমোনারী অ্যামবলিজম
হৃদযন্ত্রের প্রদাহ
হঠাৎ তীব্র পীড়াদায়ক ব্যাথা বুকের সামনে থেকে পিছনের দিকে চলে যায়।

যদি বুকে ব্যাথা হয়-

পরিশ্রম করলে
দুঃচিন্তা করলে
ঠান্ডা আবহাওয়ার সর্ষ্পশে আসলে
দুঃস্বপ্ন দেখলে বাড়ে

কিন্তু বিশ্রাম নিলে, জিহবার নীচে নাইট্রেট জাতীয় ওষুধ দিলে কমে তাহলে হৃদরোগ হয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়।

খাবার পর, শোবার সময়, গরম খাবার, মদ পান করলে এবং খালী পেটে যদি ব্যাথা বাড়ে, এ্যান্টাসীড জাতীয় ওষুধ খেলে কমে যায়, তাহলে খাদ্য নালী জানিত কারণ।

বুকের ব্যাথার সাথে শ্বাস কষ্ট হলে হৃদরোগ, পালমোনারী অ্যামবলিজম নিমোনিয়া নিউমোথোরাক্স হয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়।

পরিশ্রম শুরু করার কিছুক্ষণ পর থেকে ব্যাথা শুরু হয়, বিশ্রাম নিলেও ব্যাথা থাকে, যদি ব্যাথা নিরাময় জাতীয় ওষুধ থেকে ব্যাথা কমে তাহলে মাংশপেশী জনিত কারণ হয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়।

বুকে ব্যাথা, শ্বাসকষ্ট, এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাথা, হঠাৎ কোন শব্দ হলে বুকের ব্যাথা বেড়ে যায় ও বুক ধড়পড় করে, কোনো মৃত্যুর সংবাদ শুনলে বুকে ব্যাথা শুরু হয়, বিভিন্ন ধরনের দুঃচিন্তা করলে বুকে ব্যাথা বেড়ে যায় তাহলে মানসিক কারণে হয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়।

অনেক সময় পেট ব্যাথার সাথে বুকে ব্যাথা থাকতে পারে যেমন পিত্তথলীতে পাথর হলে হয়। যে কারণেই বুকে ব্যাথা হোক না কেন রোগী অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা যেমন বুকের পরীক্ষা করে দ্রুত রোগ নির্ণয় করতে হবে এবং সঠিক চিকিৎসা করালে বেশীর ভাগ রোগী ভাল হয়ে যায় এবং অনেক সময় দ্রুত হৃদরোগ নির্ণয় করা যায় এবং সঠিক চিকিৎসা দেয়া সম্ভব। সমস্ত পরীক্ষা নিরীক্ষা করে কোনো রোগের কারণ না পাওয়া যায় সেই ক্ষেত্রে রোগীকে সঠিক উপদেশ দিয়েও বুকের ব্যাথা ভাল করা সম্ভব।

পেটে গ্যাস হওয়া এবং গ্যাস হওয়া থেকে ব্যাথা :

লক্ষণ ও উপসর্গ :

দুর্গন্ধযুক্ত বা গন্ধহীন ঢেকুর ওঠা
পেট ফেঁপে ওঠা
পেট ফেঁপে ওঠার দরূন তলপেটে বা উদরে ব্যাথা হওয়া

কী করা উচিত :

গ্যাসের ব্যাথার থেকে রেহাই পেতে পিপারমিন্ট, কেমোমাইল কিংবা ফিনেল দিয়ে চা বানিয়ে খেতে পারেন।
যদি আপনি গ্যাস নির্গমনের চাপ অনুভব করেন সেক্ষেত্রে সেটা চেপে রাখবেন না, প্রয়োজনে রুমের বাইরে গিয়ে হলেও কাজটা সেরে ফেলুন
যদি পেটে গ্যাস হবার কারণে আপনার ব্যাথাটা তীব্র হয়ে ওঠে সেক্ষেত্রে চিত হয়ে শুয়ে পড়ে পা দুটোকে বুকের সাথে মেলাতে পারেন এবং ওভাবে কিছুক্ষণ অবহ্মহান নিতে পারেন, এই ব্যায়াম চর্চার মাধ্যমে পেটে জমে থাকা গ্যাস বের হওয়া সহজ হয়

কখন ডাক্তার দেখাবেন :

যদি পেটে গ্যাস হবার কারণে ব্যাথা আপনার নাভির কাছ থেকে শুরু হয়ে তলপেটের নিচের দিকের ডান পাশে পর্যন্ত সরতে থাকে সেক্ষেত্রে এটা হয়তো এপেনডিসাইটিসের লক্ষণ যদি আপনার তিনদিনেরও বেশি সময় ধরে ক্রমাগত আপনার পেটের স্ফিতী থেকে যায়। যদি গ্যাস নির্গমনের সময় কিংবা মল ত্যাগের সময় আপনার তলপেটে তীব্র ও আকস্মিক ব্যাথা জেগে ওঠে সেক্ষেত্রে এটা হয়তো আইবিএস বা ইরিটেবল বাউয়েল সিনড্রম-এর লক্ষণ যদি আপনার পেটে প্রায়ই গ্যাস জন্মায়, এবং আপনার ওজন যদি কমতে থাকে, এবং আপনার মলের রঙ যদি ম্লান হয় এবং দুর্গন্ধ যুক্ত হয় সেক্ষেত্রে আপনি হয়তো বদহজমের সমস্যায় ভুগছেন
(ম্যালএ্যাবজরশন ডিজওর্ডার বা স্নেহ জাতীয় পদার্থ হজমে অসমর্থতা)

কীভাবে প্রতিরোধ করবেন :

তীব্র গ্যাস এবং গ্যাস সংক্রান্ত ব্যাথা থেকে আপনি কেবল আপনার খাদ্য তালিকা পরিবর্তন করেই মুক্তি পেতে পারেন। মনে রাখবেন যে যদিও বেশি আঁশযুক্ত খাবারগুলো গ্যাস তৈরি করে কিন্তু এই খাবারগুলোই আবার একটি স্বাহ্মহকর খাদ্য তালিকার জন্যে অপরিহার্য খাবার। ফল এবং শাকসব্জি এবং বিচি জাতীয় খাবার এবং আস্ত খাদ্যকণা যেগুলো সেগুলো বাদ না দিয়ে বরং পেটে যাতে গ্যাস না হয় সেজন্যে খাদ্য তালিকায় নিম্নোক্ত পরিবর্তনগুলো চেষ্টা করে দেখতে পারেন:

শুকনো সিমের বিচি কিনুন। সারারাত সেগুলো পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এবার পানি ফেলে দিয়ে পরিস্কার পানিতে বিচিগুলো রান্নার জন্যে চড়িয়ে দিন। লক্ষ্য রাখবেন বিচিগুলো যেন পুরোপুরি সেদ্ধ হয়
প্রচুর পরিমাণ পানি বা পানীয় পান করুন যেসব খাবার বা স্ন্যাকস-কে মিষ্টি করার জন্যে ফন্সুকটোজ (ফলের চিনি) ব্যবহার করা হয় বা সরবিটল (কৃত্তিম চিনি) ব্যবহার করা হয় সেগুলো পেট ফাঁপার জন্যে দায়ী
আস্তে আস্তে খান, খাবার পুরোপুরি চর্বন করুন, এবং বেশি খাওয়া পরিত্যাগ করুন। (মনে রাখবেন যে খাবার পর পেট ভরেছে এই অনুভূতি আসতে প্রায় ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় লাগে।)
খাবার পর হালকা হাটা চলার অভ্যাস গড়ে তুলুন। মধ্যম ধরনের শরীর চর্চা হজমি শক্তিকে বাড়িয়ে তোলে এবং গ্যাস দ্রুত নির্গমনে সহায়ক ভূমিকা রাখে
কার্বোনেটেড পানীয় (যেমন কোকা কোলা, পেপসি ইত্যাদি), চুইং গাম, এবং স্ট্র দিয়ে সিপ করে করে পান করার অভ্যাস ত্যাগ করুন। এগুলোর প্রত্যেকটিই আপনার পাকস্থলিতে গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি করে

শাসতন্ত্র বা ফুসফুসীয় সমস্যা

বিজ্ঞানের নানা সুফল আমরা ভোগ করছি। কিন্তু নগরায়নের দাপটে আজ আমাদের ফুসফুসের বারোটা বাজতে বসেছে। ফুসফুসের নানা সমস্যা বর্তমানে অনেক বেড়ে গেছে। ফুসফুস প্রধানত দুটি কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রথমত, নানা ধরণের অসুখ বিসুখের কারণে এবং দ্বিতীয়ত, জন্মগত অসুখ। জন্মগত অসুখ প্রতিরোধ করা না গেলেও ফসুফুসের আরো অর্জিত বিভিন্ন অসুখ প্রতিরোধ করা যায় সহজেই।

ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হবার বিভিন্ন কারণ নিম্নে আলোচিত হল-

১. যক্ষ্মার জন্য ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
২. মশার কয়েল থেকেও ফুসফুসের ভীষণ ক্ষতি হতে পারে।
৩. দুর্ঘটনা জনিত কারণে এবং ফুসফুসে আঘাতের কারণে এর ক্ষতি হয়।
৪. কয়লা খনিতে যারা কাজ করে তাদের যক্ষ্মাসহ বিভিন্ন ফুসফুসের অসুখ দেখা যায়। ফলে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৫. ধোঁয়া, গাড়ির ধোঁয়া যাতে প্রচুর কার্বন ডাই অক্সাইড থাকে এগুলো ফুসফুসের জন্য ভীষণ বিপজ্জনক।
৬. দূষিত পরিবেশ ফুসফুসকে ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
৭. বিভিন্ন খনি অঞ্চলে ফুসফুসের অসুখ বেশী হয়।

ফুসফুস জীবন রক্ষার অপরিহার্য অঙ্গ। যদিও একটি ফুসফুস নিয়ে বাঁচা সম্ভব কিন্তু দুটি ফুসফুসই যদি রোগাক্রান্ত হয় তবে মৃত্যু অনিবার্য।

ফুসফুস সুস্থ রাখতে নিম্নবর্ণিত নিয়ম মেনে চলতে হবে-

১. ধূমপানকে চিরবিদায় জানাতে হবে। ধূমপান ফুসফুসের অনেক ক্ষতি করে। ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রধান কারণ ধূমপান।
২. মশা তাড়াতে কয়েলের পরিবর্তে মশারী ব্যবহার করা উচিত।
৩. অ্যালার্জি দীর্ঘদিন থাকলে ফুসফুসের অনেক ক্ষতি হয়। যেসব খাবারে অ্যলার্জি হয় তা থেকে দূরে থাকতে হবে।
৪. ধোঁয়াজনিত পরিবেশে অবশ্যই রুমাল ব্যবহার করতে হবে
৫. কলকারখানার ধোঁয়ার ব্যাপারে যথাযথ আইন প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
৬. গাড়ির ব্যবহার কমাতে হবে এবং পরিবেশে বান্ধব যানবাহন আবিষ্কার ও ব্যবহার বাড়াতে হবে
৭. যক্ষ্মা রোগীর কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে। কাছে গেলে মাস্ক পড়তে হবে।
৮. জন্মগত ফুসফুস রোগে যথাযথ চিকিৎসা করতে হবে।
৯. বাড়ীর চারপার্শ্বের পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
১০. ফুসফুস রোগাক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

তাই আশা করা যায় সবাই সচেতন হলে এই সুন্দর পৃথিবীতে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে ফুসফুসের সুস্থতা অপরিহার্য।