বুকের ব্যাথা এতোটা জটিল সমস্যা যার জন্য কোনো ব্যক্তিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যেতে হয়। বিভিন্ন কারণে বুকে ব্যাথা হয়ে থাকে। প্রথমে দেখতে হবে বুকে ব্যাথা আঘাত জনিত কারণে না আঘাত বিহীন কারণে। যদি আঘাত বিহীন কারণে বুকে ব্যাথা হয় তাহলে প্রথমে নিশ্চিত হতে হবে হৃদরোগজনিত কারণে না অন্য কোনো কারণে বুকে ব্যাথা হয়েছে। এই কারণ নির্ধারনের জন্য রোগীর কাছ থেকে রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত ইতিহাস জানতে হবে এবং এর পর শারীরিক ও ল্যাব পরীক্ষা করে সঠিক রোগ নির্ণয় করলে বেশীর ভাগ বুকের ব্যাথা ভাল করা সম্ভব।
প্রথমে বুকের ব্যাথা কোন স্থানে-
বুকের মাঝ খানে
বাম না ডান পার্শ্বে
বুকে ব্যাথার প্রকৃতি-
চাপ চাপ ব্যাথা
মনে হয় বুকের মাঝ খানে পাথর বসিয়ে রেখেছে এমন
দমবন্ধ হয়ে আসে এমন বা অনুভূতিহীন যেমন হৃদরোগ জনিত কারণ।
তীব্র ব্যাথা
ছুড়ি দিয়ে আঘাত করলে যেমন মনে হয়
পোড়ানো ব্যাথা
শ্বাস নেবার সাথে সাথে তীব্র ব্যাথা।
ফুসফুসজনিত কারণ যেমন :
নিমোনিয়া
পালমোনারী অ্যামবলিজম
হৃদযন্ত্রের প্রদাহ
হঠাৎ তীব্র পীড়াদায়ক ব্যাথা বুকের সামনে থেকে পিছনের দিকে চলে যায়।
যদি বুকে ব্যাথা হয়-
পরিশ্রম করলে
দুঃচিন্তা করলে
ঠান্ডা আবহাওয়ার সর্ষ্পশে আসলে
দুঃস্বপ্ন দেখলে বাড়ে
কিন্তু বিশ্রাম নিলে, জিহবার নীচে নাইট্রেট জাতীয় ওষুধ দিলে কমে তাহলে হৃদরোগ হয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়।
খাবার পর, শোবার সময়, গরম খাবার, মদ পান করলে এবং খালী পেটে যদি ব্যাথা বাড়ে, এ্যান্টাসীড জাতীয় ওষুধ খেলে কমে যায়, তাহলে খাদ্য নালী জানিত কারণ।
বুকের ব্যাথার সাথে শ্বাস কষ্ট হলে হৃদরোগ, পালমোনারী অ্যামবলিজম নিমোনিয়া নিউমোথোরাক্স হয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়।
পরিশ্রম শুরু করার কিছুক্ষণ পর থেকে ব্যাথা শুরু হয়, বিশ্রাম নিলেও ব্যাথা থাকে, যদি ব্যাথা নিরাময় জাতীয় ওষুধ থেকে ব্যাথা কমে তাহলে মাংশপেশী জনিত কারণ হয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়।
বুকে ব্যাথা, শ্বাসকষ্ট, এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাথা, হঠাৎ কোন শব্দ হলে বুকের ব্যাথা বেড়ে যায় ও বুক ধড়পড় করে, কোনো মৃত্যুর সংবাদ শুনলে বুকে ব্যাথা শুরু হয়, বিভিন্ন ধরনের দুঃচিন্তা করলে বুকে ব্যাথা বেড়ে যায় তাহলে মানসিক কারণে হয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়।
অনেক সময় পেট ব্যাথার সাথে বুকে ব্যাথা থাকতে পারে যেমন পিত্তথলীতে পাথর হলে হয়। যে কারণেই বুকে ব্যাথা হোক না কেন রোগী অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা যেমন বুকের পরীক্ষা করে দ্রুত রোগ নির্ণয় করতে হবে এবং সঠিক চিকিৎসা করালে বেশীর ভাগ রোগী ভাল হয়ে যায় এবং অনেক সময় দ্রুত হৃদরোগ নির্ণয় করা যায় এবং সঠিক চিকিৎসা দেয়া সম্ভব। সমস্ত পরীক্ষা নিরীক্ষা করে কোনো রোগের কারণ না পাওয়া যায় সেই ক্ষেত্রে রোগীকে সঠিক উপদেশ দিয়েও বুকের ব্যাথা ভাল করা সম্ভব।
পেটে গ্যাস হওয়া এবং গ্যাস হওয়া থেকে ব্যাথা :
লক্ষণ ও উপসর্গ :
দুর্গন্ধযুক্ত বা গন্ধহীন ঢেকুর ওঠা
পেট ফেঁপে ওঠা
পেট ফেঁপে ওঠার দরূন তলপেটে বা উদরে ব্যাথা হওয়া
কী করা উচিত :
গ্যাসের ব্যাথার থেকে রেহাই পেতে পিপারমিন্ট, কেমোমাইল কিংবা ফিনেল দিয়ে চা বানিয়ে খেতে পারেন।
যদি আপনি গ্যাস নির্গমনের চাপ অনুভব করেন সেক্ষেত্রে সেটা চেপে রাখবেন না, প্রয়োজনে রুমের বাইরে গিয়ে হলেও কাজটা সেরে ফেলুন
যদি পেটে গ্যাস হবার কারণে আপনার ব্যাথাটা তীব্র হয়ে ওঠে সেক্ষেত্রে চিত হয়ে শুয়ে পড়ে পা দুটোকে বুকের সাথে মেলাতে পারেন এবং ওভাবে কিছুক্ষণ অবহ্মহান নিতে পারেন, এই ব্যায়াম চর্চার মাধ্যমে পেটে জমে থাকা গ্যাস বের হওয়া সহজ হয়
কখন ডাক্তার দেখাবেন :
যদি পেটে গ্যাস হবার কারণে ব্যাথা আপনার নাভির কাছ থেকে শুরু হয়ে তলপেটের নিচের দিকের ডান পাশে পর্যন্ত সরতে থাকে সেক্ষেত্রে এটা হয়তো এপেনডিসাইটিসের লক্ষণ যদি আপনার তিনদিনেরও বেশি সময় ধরে ক্রমাগত আপনার পেটের স্ফিতী থেকে যায়। যদি গ্যাস নির্গমনের সময় কিংবা মল ত্যাগের সময় আপনার তলপেটে তীব্র ও আকস্মিক ব্যাথা জেগে ওঠে সেক্ষেত্রে এটা হয়তো আইবিএস বা ইরিটেবল বাউয়েল সিনড্রম-এর লক্ষণ যদি আপনার পেটে প্রায়ই গ্যাস জন্মায়, এবং আপনার ওজন যদি কমতে থাকে, এবং আপনার মলের রঙ যদি ম্লান হয় এবং দুর্গন্ধ যুক্ত হয় সেক্ষেত্রে আপনি হয়তো বদহজমের সমস্যায় ভুগছেন
(ম্যালএ্যাবজরশন ডিজওর্ডার বা স্নেহ জাতীয় পদার্থ হজমে অসমর্থতা)
কীভাবে প্রতিরোধ করবেন :
তীব্র গ্যাস এবং গ্যাস সংক্রান্ত ব্যাথা থেকে আপনি কেবল আপনার খাদ্য তালিকা পরিবর্তন করেই মুক্তি পেতে পারেন। মনে রাখবেন যে যদিও বেশি আঁশযুক্ত খাবারগুলো গ্যাস তৈরি করে কিন্তু এই খাবারগুলোই আবার একটি স্বাহ্মহকর খাদ্য তালিকার জন্যে অপরিহার্য খাবার। ফল এবং শাকসব্জি এবং বিচি জাতীয় খাবার এবং আস্ত খাদ্যকণা যেগুলো সেগুলো বাদ না দিয়ে বরং পেটে যাতে গ্যাস না হয় সেজন্যে খাদ্য তালিকায় নিম্নোক্ত পরিবর্তনগুলো চেষ্টা করে দেখতে পারেন:
শুকনো সিমের বিচি কিনুন। সারারাত সেগুলো পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এবার পানি ফেলে দিয়ে পরিস্কার পানিতে বিচিগুলো রান্নার জন্যে চড়িয়ে দিন। লক্ষ্য রাখবেন বিচিগুলো যেন পুরোপুরি সেদ্ধ হয়
প্রচুর পরিমাণ পানি বা পানীয় পান করুন যেসব খাবার বা স্ন্যাকস-কে মিষ্টি করার জন্যে ফন্সুকটোজ (ফলের চিনি) ব্যবহার করা হয় বা সরবিটল (কৃত্তিম চিনি) ব্যবহার করা হয় সেগুলো পেট ফাঁপার জন্যে দায়ী
আস্তে আস্তে খান, খাবার পুরোপুরি চর্বন করুন, এবং বেশি খাওয়া পরিত্যাগ করুন। (মনে রাখবেন যে খাবার পর পেট ভরেছে এই অনুভূতি আসতে প্রায় ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় লাগে।)
খাবার পর হালকা হাটা চলার অভ্যাস গড়ে তুলুন। মধ্যম ধরনের শরীর চর্চা হজমি শক্তিকে বাড়িয়ে তোলে এবং গ্যাস দ্রুত নির্গমনে সহায়ক ভূমিকা রাখে
কার্বোনেটেড পানীয় (যেমন কোকা কোলা, পেপসি ইত্যাদি), চুইং গাম, এবং স্ট্র দিয়ে সিপ করে করে পান করার অভ্যাস ত্যাগ করুন। এগুলোর প্রত্যেকটিই আপনার পাকস্থলিতে গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি করে
No comments:
Post a Comment